Category Archives: জাতীয়
হাওরের কান্না থামবে কি শুধু বাঁধে!

আজাদুর রহমান চন্দন

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত জেলার বড় অংশই হাওর। আর ওসব হাওরে বছরে একটিই মাত্র ফসল হয়, বোরো ধান। কিন্তু গত দুই দশকে গড়ে প্রতি তিন বছরেও একবার পুরো

ফসল ঘরে তুলতে পারেননি হাওরের কৃষকরা। টানা কয়েক বছর ফসল মার যাওয়ার পর ২০০৮ সালে হাওরে বোরো ধান কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়েছিল। এর পরের ৯ বছরের মধ্যে মাত্র দুইবার পুরো ফসল ঘরে তুলতে সক্ষম হয় হাওরের কৃষক। অসময়ে কয়েক দিনের টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে এ বছর ধানগাছে থোড় আসতে না আসতেই কোথাও বাঁধ ভেঙে, কোথাও বাঁধ উপচে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে প্রায় সব হাওর। আগের বছর হাওরে বাঁধ ভেঙে কোথাও পাকা, কোথাও আধাপাকা বোরো ধান নষ্ট হয়েছিল চৈত্রের শেষ থেকে বৈশাখের শুরুতে। সে বছর ৪০ শতাংশের মতো ফসল তুলতে পেরেছিল হাওরের কৃষকরা। ২০১৫ সালে অকালবন্যায় হাওরে ফসল নষ্ট হয়েছিল শতকরা ৪০ ভাগের মতো।

Continue Reading →
যুদ্ধাপরাধীর তালিকা সন্ধান

আজাদুর রহমান চন্দন

একাত্তরের পঁচিশে মার্চ কালরাতে ঢাকায় ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে গণহত্যা আর ধ্বংসের যে তাণ্ডবলীলা শুরু করেছিল হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী, দ্রুতই তারা এর বিস্তার ঘটিয়েছিল সারাদেশে। সেই রাতের সামরিক অভিযানের ভয়াবহতা প্রকাশ করতে গিয়ে পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানেরই এক সেনা কর্মকর্তা তার বইয়ে লিখেছেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগেই অ্যাকশন শুরু হয়ে গিয়েছিল।… খুলে গিয়েছিল নরকের সবকটি দরজা।’ এভাবেই হানাদাররা পরবর্তী ৯ মাসে গোটা বাংলাদেশকেই এক বিশাল নরকে পরিণত করেছিল, যা দেখে মার্কিন সাংবাদিক সিডিনি এইচ শনবার্গ নিউইয়র্ক টাইমসে লিখেছিলেন ‘‘বেঙ্গলি’স ল্যান্ড অ্যা ভাস্ট সিমেটারি’’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২০ জানুয়ারি সিকান্দর আবু জাফরের লেখা এক বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল পূর্বদেশ পত্রিকায়, যার শিরোনাম ছিল ‘গ্রামে গ্রামে বধ্যভূমি তার নাম আজ বাংলাদেশ’। আর গোটা বাংলাদেশকে বধ্যভূমি বানানোর সেই দুষ্কর্মে সক্রিয় সহযোগিতা করেছিল হানাদারদের স্থানীয় কিছু দোসর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামে নানা সংগঠন ও বাহিনী গড়ে। এদের মধ্যে আলবদর নামের জল্লাদ বাহিনীটি হয়ে উঠেছিল হানাদার বাহিনীর ‘ডেথ স্কোয়াড’।

Continue Reading →

অত্যাচারী বাপ-বেটার দর্প চূর্ণ একই কারাগারে

আজাদুর রহমান চন্দন

ফ. কা. চৌধুরী নামে পরিচিত চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের (কনভেনশন) সভাপতি। ষাটের দশকে পাকিস্তানের মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকারও হন ফ.কা.। সারা পাকিস্তানেই তিনি ছিলেন প্রচণ্ড প্রতাপশালী। ফ.কা. চৌধুরী এতটাই প্রভাবশালী ও দাম্ভিক ছিলেন যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী গণহত্যা শুরু করার পর মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, পিডিপিসহ দালাল দলগুলোর অন্য নেতারা দল বেঁধে গভর্নর টিক্কা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও ফ.কা. তার সঙ্গে দেখা করেছেন শুধু নিজ দলের জেনারেল সেক্রেটারি মালিক মোহাম্মদ কাসিমকে নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধকালে শান্তি কমিটিরও আলাদা একটি ধারা ছিল ফ.কা.র নেতৃত্বে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর তার প্রভাব ছিল যেমন অসীম, তেমনি চট্টগ্রামে মুক্তিকামী মানুষ, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর তার নির্যাতনও ছিল অসহনীয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর থেকে আত্মসমর্পণের কয়েক দিন আগ পর্যন্ত তার বাসায় সব সময় মোতায়েন থাকত পাকিস্তান বাহিনীর এক প্লাটুন সৈন্য। ফ.কা.র অনুচরেরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে আনত নিরপরাধ লোকজন আর ছাত্রদের।

Continue Reading →

ফাঁসিতে ঝুলতেই হলো ঘাতক সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদকে

আজাদুর রহমান চন্দন

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি অবশেষে কার্যকর করা হয়েছে। আদালতের রায় অনুযায়ী আজ শনিবার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে শীর্ষস্থানীয় এই দুই অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে আইজি প্রিজন্স জানান। এর মধ্য দিয়ে দেশে প্রথম কোনো মন্ত্রীর ফাঁসি কার্যকর হলো। দুই অপরাধীই ভিন্ন ভিন্ন সরকারের সময় মন্ত্রী ছিলেন। দুজনের মধ্যে একাত্তরের কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদের প্রাণদণ্ড দেওয়া হয় বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে। একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে এটিই প্রথম ফাঁসি। তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এ নিয়ে চারজনের ফাঁসি কার্যকর হলো। ফাঁসি কার্যকর শেষে র‌্যাব ও পুলিশ প্রহরায় সাকা চৌধুরীর লাশ চট্টগ্রামে এবং মুজাহিদের লাশ ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিচার নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দম্ভোক্তি প্রকাশকারী দুই মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করার আগে কারাগার এলাকায় জড়ো হন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা এবং গণজাগরণ মঞ্চের কয়েকজন কর্মী। তাঁরা সাকা ও মুজাহিদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকর করার দাবিতে স্লোগানও দেন। Continue Reading →

খন্দকার মোশতাকের প্রেতাত্মারা ক্ষমতা ঘিরছে?

আজাদুর রহমান চন্দন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার সময় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছিলেন বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায়। সঙ্গে ছিলেন শেখ হাসিনার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ আলী মিয়া। ঢাকার খবর জেনে সানাউল হক তখন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তার বাসায় রাখতে চাননি। সে সময় হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছিলেন পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে জার্মানিতে পাঠিয়ে দিতে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সেদিন ফোন করেছিলেন সানাউল হককে। কিন্তু সেখান থেকে সানাউল হক তার গাড়িটি পর্যন্ত দেননি সীমান্তে তাদের দিয়ে আসার জন্য। পরে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী নিজেই সীমান্ত থেকে গাড়ি পাঠিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাদের তার কাছে নিয়েছিলেন। Continue Reading →

কলঙ্ক মোচনের বিচারপথে এখনো কিছু কালো ছায়া

আজাদুর রহমান চন্দন

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি একাত্তরের নরঘাতকদের বিচার দেখার প্রতীক্ষায় কাটিয়েছে চার দশকেরও বেশি সময়। নানা অনিশ্চয়তা, হতাশা আর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর অবশেষে সেই প্রতীক্ষার অবসান শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে জাতির কলঙ্ক মোচন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়ায় প্রথম ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বাংলাদেশের ৪৩তম বিজয় দিবসের প্রাক্কালে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে। সেদিন রাত ১০টা ১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় কসাই কাদের নামে পরিচিত আলবদর কমান্ডার আবদুল কাদের মোল্লাকে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার ফাঁসি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। এর মাধ্যমে একাত্তরের নির্মমতার বিচারহীনতা থেকে মুক্তি পেতে শুরু করে জাতি। অনেক দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা, গাফিলতি, চক্রান্ত সত্ত্বেও চলমান রয়েছে সেই বিচারকাজ। এরইমধ্যে গত ১১ এপ্রিল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘাতক আলবদর বাহিনীর বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান সংগঠক মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের, যিনি যুদ্ধের শেষ দিকে আলবদর হাইকান্ডেও ঠাঁই পেয়েছিলেন। কুখ্যাত সেই বদর বাহিনীর প্রধান আলী আহসান মুজাহিদের প্রাণদণ্ড বহাল আছে আপিলের রায়ে। এখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপক্ষায়। এসবই জাতির জন্য সুখবর। তবে চার দশকের কলঙ্ক মোচনের এই বিচার চলাকালে সময়ে সময়ে জাতির কাঁধে ভর করেছে ভয় আর হতাশা। Continue Reading →

শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা বিফলে চূড়ান্ত বিচারেও

আজাদুর রহমান চন্দন

মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম দূরের কথা, দেশেই ছিলেন না–এমন দাবি করে আসছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, যিনি সাকা চৌধুরী নামেই বেশি পরিচিত। দাবি প্রমাণ করার হাজারো কসরত করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলাকালে এই আসামি নিজের পক্ষে কয়েকজন সাফাই সাক্ষী হাজির করেছেন, যাতে প্রমাণ করা যায় ১৯৭১ সালে তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। সাকা চৌধুরীর পক্ষের আইনজীবীরা দাবিটিকে ‘প্লি অব অ্যালিবাই’ (অপরাধ সংঘটনের সময় আসামির অপরাধস্থলে উপস্থিত না থাকার দাবি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। ফৌজদারি অপরাধের যেকোনো মামলায় প্লি অব অ্যালিবাই প্রমাণিত হলে আসামিকে দোষী প্রমাণ করার আর কোনো সুযোগ থাকে না। এ বিবেচনায়ই হয়তো আসামিপক্ষ ট্রাইব্যুনালে তো বটেই এমনকি আপিল বিভাগেও এ বিষয়ের ওপর জোর দেয় সবচেয়ে বেশি। Continue Reading →

বুদ্ধিজীবীঘাতকের ফাঁসি বহাল : কলঙ্ক মোচনের পথে আরেক ধাপ

আজাদুর রহমান চন্দন 

বুদ্ধিজীবীদের ঘাতক ও মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের জন্ম ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পশ্চিম খাবাশপুর গ্রামে ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি। তার বাবা আব্দুল আলী (মৃত) মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্য। মুজাহিদ প্রাথমিক শিক্ষা শেষে প্রথমে ময়েজুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং পরে ফরিদপুর জিলা স্কুলে ভর্তি হন। বাবার পথ অনুসরণ করে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় মুজাহিদ যোগ দেন জামায়াতের তখনকার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘে। ১৯৬৪ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ভর্তি হন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে। রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি হন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন। এরপর তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালের শুরুর দিকে তিনি ঢাকা জেলা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি হন। পরে মুক্তিযুদ্ধ চলা অবস্থায় ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে মুজাহিদ পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পান। তখন সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী। মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজামী ও মুজাহিদের নির্দেশে ও তত্ত্বাবধানে ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল কুখ্যাত আলবদর বাহিনী। Continue Reading →

‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’ প্রথম আলোচিত কামারুজ্জামানের মামলায়

আজাদুর রহমান চন্দন

সাংগঠনিক বা প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন স্তর বিন্যাসে বিরাজমান বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে অপরাধের দায় নিরূপণ বিষয়ে একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি হলো- অধীনস্থদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের দায় ঊর্ধ্বতন অবস্থানে থাকা ব্যক্তির ওপর গিয়ে সরাসরি বর্তায়। ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’ নামের এই নীতি ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠা করে ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল। এই নীতির ভিত্তিতে তখন রিবেনট্রপ, ফ্রাংক, রোসেনবার্গ ও জুলিয়াস স্ট্রেইচারসহ নাজি যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডসহ অন্যান্য দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। টোকিও ট্রায়ালেও এই নীতি প্রয়োগ হয়। বাংলাদেশেও যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের ৪(২) ধারায় উল্লেখ আছে এই নীতি।
আইনে উল্লেখ থাকলেও মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম দিককার মামলাগুলোতে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি তুলে ধরেনি বা তুলে ধরতে পারেনি প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা ও জনদাবির মুখে সরকার প্রসিকিউশনে কিছু পরিবর্তন আনে। আরো কয়েকজনের সঙ্গে প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় ড. তুরিন আফরোজকে। মুক্তিযুদ্ধকালীন আলবদর হাইকমান্ডের অন্যতম সদস্য মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার মধ্য দিয়েই প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ শুরু করেন তুরিন। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) অবশ্য দাখিল করা হয়েছিল আগেই। তাতে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির নীতি সামনে আনা হয়নি। তা সত্ত্বেও শুনানিকালে তুরিন আফরোজ বিষয়টি সামনে আনেন প্রথমবারের মতো। এর ফলে বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনালের রায়েও প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠিত হয় এই নীতি। Continue Reading →

রিভিউয়ের নামে অনুকম্পা চেয়েছিলেন তারা

আজাদুর রহমান চন্দন 
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) করার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত কামারুজ্জামানের পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয় গতকাল ৫ এপ্রিল রবিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে। আজ সোমবার সকালে আপিল বিভাগ পুনর্বিবেচনার আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। কি কারণে আবেদনটি খারিজ করা হলো তা জানা যায়নি। সকাল ৯টা পাঁচ মিনিটে এজলাসে বসেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ আপিল বিভাগের চার বিচারপতি। এক মিনিটের কম সময়ের ব্যবধানে আদেশ দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি আদেশে বলেন, ‘পিটিশন ডিসমিসড’ (আবেদন খারিজ)। সংক্ষিপ্ত এই আদেশে কোনো ব্যাখ্যা না থাকলেও আগের দিনের শুনানি থেকেই বোঝা যায় কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা রিভিউ আবেদনের নামে মূলত অনুকম্পা চেয়েছিলেন যাতে আসামির সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। Continue Reading →

Next Page