চক্রান্তে শুরু চক্রান্তেই শেষ

আজাদুর রহমান চন্দন

পরাধীন ভারতবর্ষে নানান মতে নানান দলে দলাদলি সত্ত্বেও আলেম-ওলামা, সুফি, সাধু-সন্ন্যাসীসহ সব জাতপাত, শ্রেণি-পেশা ও দলের মানুষ যখন স্বাধীনতা কামনায় ‘মানব না এ বন্ধনে, মানব না এ শৃঙ্খলে’ বলে একাট্টা, তখনো এ ভূখণ্ডের ক্ষুদ্র একটি অংশ লিপ্ত ছিল ব্রিটিশ শাসকদের তাঁবেদারিতে। এর কারণও ছিল। জামায়াতে ইসলামী নামে ধর্মের লেবাস পরা ওই দলটির যে জন্মই দেওয়া হয়েছিল ব্রিটিশ প্রভুদের তাঁবেদারি করার জন্য। গোলাম আযমের গুরু মওদুদীর গড়া দলটি সেই কাজ ভালোভাবেই সেরেছে তখন। তবে তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হয়। তবে ধর্ম ব্যবসায়ী একটি মহলের চক্রান্তের সুযোগে ভারতবর্ষকে দুর্বল করার হীন উদ্দেশে তখন তথাকথিত দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ করা হয় দেশ। ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টির কোনো মিল না থাকা সত্ত্বেও হাজার মাইল দূরে থাকা দুটি ভূখণ্ডকে এক রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করা হয়। যদিও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও গোলাম অযমের দল জামায়াতের সমর্থন ছিল না। গোলাম আযমের গুরু ও জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী তখন বলেছিলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি করা কেউই ‘খাঁটি মুসলমান’ নয়।

Continue Reading →

কার দুর্বলতা কার ঘাড়ে চাপাতে চান আইনমন্ত্রী?

আজাদুর রহমান চন্দন 

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিলের রায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমায় মর্মাহত হয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বুধবার আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে নিজের এ অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে পরিবর্তনও চেয়েছেন। নিজের বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি একজন ব্যক্তি, সরকারের সদস্য ও নাগরিক হিসাবে সর্বোচ্চ আদালতের যে কোনো আদেশ ও রায়ের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে মানবতাবিরোধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি আমরা আশা করি, সেটা না হওয়ায় আমি মর্মাহত।’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড হলেও আপিলের রায়ে সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কোনো দুর্বলতা ছিল কি না জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘আমি রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি না দেখে কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। তবে প্রসিকিউশন টিমের যা অবস্থা, সেখানে পরিবর্তন আসা উচিৎ।’ তিনি বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে কিছু কিছু মামলা চলছে, কিছু রায় অপেমাণ আছে। প্রসিকিউশন টিমের যেন কোনো অসুবিধা না হয় এজন্য আমি কোনো পরিবর্তন আনিনি। তবে দ্রুত এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আইনমন্ত্রীর এ মন্তব্যে অনেক প্রশ্ন ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন হলো মন্ত্রী প্রসিকিউশনে কেন পরিবর্তন আনতে চান? মামলা পরিচালনায় যারা দক্ষতা দেখাতে পারেননি তাদের তিনি সরাতে চান, নাকি নিজের কাছের প্রসিকিউটরদের রেখে যারা অপেক্ষাকৃত ভাল পারফরমেন্স দেখিয়েছেন তাদের? এসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এ কারণে যে, আপিলের রায় পক্ষে না যাওয়ায় মন্ত্রী প্রসিকিউশনে পরিবর্তন আনার তাগিদ বোধ করেছেন। অথচ আপিল বিভাগে এ মামলা পরিচালনার মূল দায়িত্বে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। রায় ঘোষণার রাতে টেলিভিশনের টকশোতে দেখা গেল, অ্যাটর্নি জেনারেল উল্টো চিফ প্রসিকিউটরের বয়সজনিত দুর্বলতা তুলে ধরে তার সমালোচনা করলেন। প্রকারান্তরে তিনি চিফ প্রসিকিউটর পদে পরিবর্তন আনার ইঙ্গিতই দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যে অনেক মিল পাওয়া যায়। Continue Reading →

দুই দশকের নিভৃতচারী এক পৃষ্ঠপোষকের বিদায়

আজাদুর রহমান চন্দন

ছাত্র আন্দোলন, ক্ষেতমজুর আন্দোলন ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুরোভাগে থেকে এক পর্যায়ে আড়ালে চলে গিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ দুই দশক নেপথ্যে নিভৃতেই ছিলেন। তবুও ছিলেন সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গেই। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলেন অভিভাবকের মতো। তিনি সাবেক ছাত্রনেতা, ইউকসুর সাবেক ভিপি খন্দকার মোহাম্মদ ফারুক। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রবিবার দুপুরে মৃত্যু হয়েছে তার।
ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খন্দকার ফারুকের বয়স পঞ্চাশের কোঠা পেরোয়নি। এমন অকালে তার চলে যাওয়া মানা যায় না।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বছর দুয়েক আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন খন্দকার ফারুক। তখন কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা পেয়েছিলেন তিনি। মাঝে-মধ্যেই কাশির সঙ্গে রক্ত বের হত। মাসখানেক আগেও একবার ব্যাংককে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। শুক্রবার কাশির সঙ্গে রক্ত বের হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ব্যাংককে যান। রবিবার দুপুরে হোটেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখানেই তিনি মারা যান। Continue Reading →

যা করার আগেই করতে হবে
আজাদুর রহমান চন্দন
যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা যাবে কি না, সে বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দিতে চান সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বর্তমান আইনে দল হিসেবে জামায়াতের বিচার করা সম্ভব নয় বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যে মন্তব্য করেছেন সে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিজের মত জানান শফিক আহমেদ। তিনি বলেন, “যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, আইনজীবী হিসাবে আমার মন্তব্য হল, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র ট্রাইব্যুনালেরই আছে যে, আইন অনুসারে বিচার করা যাবে কি না। যখন বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের সামনে আসবে। তখনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময়।”
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের মতো একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রীর কাছ থেকে এতটা অপরিপক্ক বক্তব্য আশা করা যায় না। ট্রাইব্যুনাল একবার বিষয়টি খারিজ করে দিলে পরে আর আইন সংশোধন করেও পার পাওয়া যাবে না। তাই যা করার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিলের আগেই করতে হবে।

Continue Reading →

মণি সিংহ : ইতিহাসের যুবরাজ

আজাদুর রহমান চন্দন

কমরেড মণি সিংহ একটি আদর্শের প্রতীক, একটি সংগ্রামের প্রতীক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রবাদতুল্য পুরুষ তিনি। ঔপনিবেশিক শৃঙ্খলে আবদ্ধ উপমহাদেশের শোষণমুক্তি ও জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের প্রথম বার্তাবহদের একজন। বিদেশি শাসনের শৃঙ্খল থেকে উপমহাদেশকে মুক্ত করার সংগ্রামে অসহযোগ খেলাফত আন্দোলনের আমলে যে বিপ্লবী তরুণরা সর্বস্ব ছেড়ে সামনের সারিতে এসে যোগ দিয়েছিলেন, মণি সিংহ তাঁদের অন্যতম। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পরাধীনতা থেকে উপমহাদেশকে স্বাধীন করার লড়াই এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের মহানায়ক তিনি। দীর্ঘ সাত দশক ধরে জাতীয় মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামের পাশাপাশি এ দেশের শোষিত-নিপীড়িত-মেহনতি মানুষের চূড়ান্ত মুক্তির জন্য কমিউনিস্ট আন্দোলন ও কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার েেত্র যে অবদান তিনি রেখে গেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। স্বাধীনতা সংগ্রামে মেহনতি জনতার ভূমিকা যাঁদের উদ্যোগে প্রবল ও প্রধান হয়ে ওঠে, মণি সিংহ তাঁদের অন্যতম। স্বাধীনতা সংগ্রামের কর্মকাণ্ডে সর্বহারা, কৃষক, মজুর ও বিত্তহীন বুদ্ধিজীবীদের আশা-আকাক্সাকে পুরোভাগে আনার চেষ্টা করেন তিনি। Continue Reading →

অর্থবছর গণনায় পরিবেশ ও উন্নয়নমবিমুখ পাকিস্তানি ধারা!

আজাদুর রহমান চন্দন
প্রতিবছর ঘটা করে পয়লা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ উদযাপন করি আমরা। কিন্তু পয়লা বৈশাখ কী শুধুই উৎসবের বিষয়, সংস্কৃতির বিষয়? বাংলার তথা এ অঞ্চলের অর্থনীতির সঙ্গে এর সম্পর্কের বিষয়টি কি আমরা ভুলেই থাকব? উন্নয়ন নীতিমালায় প্রকৃতি ও পরিবেশ যে মোটেই গুরুত্ব পায়নি তার বড় নজির আমাদের দেশের অর্থবছরের হিসাবটি। এক বর্ষায় (জুলাই মাস) অর্থবছর শুরু হয়ে আরেক বর্ষায় (জুন) তা শেষ হয়। উন্নয়ন প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি বড় বাধা।
২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে এক নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর বর্ষায় অর্থবছর শুরু হয় বলে ওই সময় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজগুলো করা সম্ভব হয় না। তবে প্রকল্পের নথিপত্রের কাজগুলো ওই সময়ের মধ্যে শেষ করে ফেলার জন্য সচিবদের নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাগজপত্রের কাজ শেষে শুকনো মৌসুমে অবকাঠামোগত কাজগুলো করতে হবে। এতে অর্থের অপচয় বন্ধ এবং জনগণের উপকার হবে।
প্রধানমন্ত্রী একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা ধরতে পেরেছেন, সেজন্য তাকে অভিনন্দন। তবে এ সমস্যা থেকে উত্তরণের যে পথ তিনি দেখিয়েছেন তা তেমন কাজে আসবে বলে মনে হয় না। এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হলো অর্থবছর গণনার ধারাটা পাল্টে ফেলা। এ দেশে অর্থবছরের হিসাবটা অবশ্য বরাবর এ রকম ছিল না। Continue Reading →

‘আদিবাসী’ দাবির পক্ষাবলম্বন কতটা বুঝে, কতটা আবেগে?

আজাদুর রহমান চন্দন

বাঙালি ছাড়া দেশের অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষদের পরিচয় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা মনঃপুত হয়নি অনেকের। ওইসবর জাতিসত্তার মানুষেরা কয়েক বছর যাবৎ নিজেদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করে আসছেন। সিপিবিসহ দেশের বামপন্থী দলগুলোরও সমর্থন রয়েছে এ দাবির প্রতি। কিন্তু ‘আদিবাসী’ শব্দে আপত্তি আছে সরকারের। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ‘নাগরিকত্ব’ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে–
(১) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে।
(২) বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।
‘উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি’ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র বিভিন্ন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আঞ্চলিক সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও বিকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
এই সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার একটি বড় ভুল করলো। দেশের সব মানুষকে ‘জাতি হিসেবে বাঙালি’ বানিয়ে মোটেই ঠিক কাজ করেনি সরকার। আবার বাঙালি ছাড়া দেশের অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষদের ‘আদিবাসী’ বলাটাও বাস্তব সম্মত নয়। এতে দেশের বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর ওপর ক্ষুদ্র জাতিসত্তার খবরদারি কায়েম হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ‘আদিবাসী’ বা ‘ক্ষুদ্রজাতি’ এসব না বলে সরাসরি তাদের জাতি পরিচয় যেমন গারো, হাজং, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি বলা যায় কিংবা সবাইকে একসঙ্গে বোঝানোর বেলায় ভারতের মতো জনজাতি বা তফসিলি জাতি বলা যায়।

২০১১ সালের ২৭ জুন ‘‘কম্পেডিয়াম অন ন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ল’স অ্যান্ড ইন্ডিজেনাস পিপল্স ইন বাংলাদেশ’’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, ‘‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন-২০১০ এর আগে সব সরকারি নথিতে আদিবাসীদের উপজাতি হিসেবে লেখা হতো। ক্ষুদ্রত্ব ও বড়ত্বের ধারণা দেওয়ার কারণে যদিও এই নামটি আমাদের পছন্দ নয়, তথাপি এর মাধ্যমে ‘উপজাতি’ কথাটি ডাস্টবিনে ফেলতে পেরেছি। এখন আবার ওই উপজাতি কথাটিকে সরকার ডাস্টবিন থেকে তুলে আনার চেষ্টা করছে।’’ ইংরেজি ‘ট্রাইব’ শব্দের প্রতিশব্দ ‘উপজাতি’ যথাযথ হয়নি বলেও মনে করেন দেবাশীষ রায়। তিনি বলেন, ভারতের সংবিধানে অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর অর্থে ‘তফসিলি জাতি’ ও ‘জনজাতি’ কথাটির উল্লেখ রয়েছে। বাংলাদেশেও সেটি করা যেতে পারে। Continue Reading →

আলোচিত আঁতাত, অনালোচিত দুর্বলতা

আজাদুর রহমান চন্দন

একাত্তরে সংঘটিত গণহত্যা (Genocide) ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে শুরু থেকেই নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা চলছে দেশে-বিদেশে। এ আলোচনা-সমালোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার পর। রায় ঘোষণার পরপরই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা, এ মামলার কয়েকজন সাক্ষীসহ বিশিষ্টজনরা রায়ের ব্যাপারে গভীর হতাশা, এমনকি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ট্রাইব্যুনালের বাইরের চত্বরে এবং পাশেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এরপর সন্ধ্যায় শাহবাগ এলাকায় জড়ো হতে থাকেন তরুণ ব্লগাররা। এক পর্যায়ে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। রাতভর তাঁরা সেখানে অবস্থান করেন এবং একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’ নামে পরিচিত কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি জানান। শাহবাগে ওই কর্মসূচি ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে দেশব্যাপী। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও এ রায়ের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। নানা কর্মসূচিও দেয় অনেক সংগঠন। Continue Reading →

এই হলো সরকার ও প্রসিকিউশনের অবস্থা

আজাদুর রহমান চন্দন

রাষ্ট্রপক্ষের অনেক দুর্বলতার বিষয় জানেন অনেকেই। বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিমকে (রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদল) শক্তিশালী করার দাবি জানানো হয়েছে শুরু থেকেই। এক পর্যায়ে তদন্ত সংস্থা শক্তিশালী করা হলেও তাদের সঙ্গে কোনো গবেষক রাখা হয়নি। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, গবেষক নিয়োগের জন্য বারবার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে প্রসিকিউশন টিমের দু-একজন সদস্য ছাড়া অন্যদের পেশাগত জীবনে সাধারণ মামলা পরিচালনায়ও দক্ষতা দেখানোর নজির নেই। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলাসহ কয়েকটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ও ফরমাল চার্জ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সেগুলোতে গণহত্যা ও সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়নি। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম ও বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষস্থানীয় চার আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষরে দাখিল করা ফরমাল চার্জ ট্রাইব্যুনাল প্রথম দফায় ফেরত দিয়েছিল সেগুলো সুবিন্যস্তভাবে লেখা না হওয়ায়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা উল্টো প্রসিকিউটরদের সাফাই গেয়েছেন। অথচ বিচার চলাকালে নানা দুর্বলতার জন্য প্রসিকিউশনকে ট্রাইব্যুনালের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। Continue Reading →

গোলাম আযমকে অনুকম্পা দেখানো কতটা ন্যায্য?

আজাদুর রহমান চন্দন

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান ষড়যন্ত্রকারী, উসকানিদাতা এবং রাজাকার, আলবদর, আলশামসের মতো প্যারামিলিটারি গড়ার মূল কারিগর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১৫ জুলাই এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়েছে, গোলাম আযমকে ৯০ বছর অথবা আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতি বিবেচনায় গোলাম আযমের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য। কিন্তু তাঁর বয়স ৯১ বছর ও শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হলেও অসুস্থতার কারণে সেদিন থেকেই ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে তাঁকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে রাখা হয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
মানবতাবিরোধী অপরাধে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলার এ রায় ঘোষণার পর পরই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক, বিশিষ্টজনসহ অনেক সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন সংগঠনকেও তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্লোগান উঠেছে- ‘আঁতাতের এই রায় মানি না।’ এ ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ হলো হরতাল। Continue Reading →

Previous Page · Next Page