যা করার আগেই করতে হবে
আজাদুর রহমান চন্দন
যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা যাবে কি না, সে বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দিতে চান সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বর্তমান আইনে দল হিসেবে জামায়াতের বিচার করা সম্ভব নয় বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যে মন্তব্য করেছেন সে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে রবিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিজের মত জানান শফিক আহমেদ। তিনি বলেন, “যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, আইনজীবী হিসাবে আমার মন্তব্য হল, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র ট্রাইব্যুনালেরই আছে যে, আইন অনুসারে বিচার করা যাবে কি না। যখন বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের সামনে আসবে। তখনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সময়।”
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের মতো একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রীর কাছ থেকে এতটা অপরিপক্ক বক্তব্য আশা করা যায় না। ট্রাইব্যুনাল একবার বিষয়টি খারিজ করে দিলে পরে আর আইন সংশোধন করেও পার পাওয়া যাবে না। তাই যা করার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিলের আগেই করতে হবে।

এটা ঠিক যে, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জামায়াতের বিচার নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে কিছুটা তালগোল পাকিয়েছেন। আগেই বলেছি, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল নিয়ে আপিল প্রসঙ্গে মন্ত্রী যা বলেছেন তা একেবারেই অযৌক্তিক। কারণ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের ‘সাময়িক নিবন্ধন’ বৈধ কি না, সে-সংক্রান্ত মামলার সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে দলটির বিচার সাংঘর্ষিক হতে পারে না। কিন্তু আইনমন্ত্রী সংগঠনের শাস্তির বিষয়ে আইনগত যে জটিলতার কথা বলেছেন, তার যৌক্তিকতা অবশ্যই আছে। আইনগত বিষয়ে তার এ অবস্থানটিও নতুন নয়। আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধন করে যখন সংগঠনের বিচারের বিধান যুক্ত করা হয় তখনই আনিসুল হক তার এ অবস্থান তুলে ধরেছিলেন। সম্ভবত আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের একটি অংশ খুব জেনারালাইজড হওয়ায় সেটি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। মন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান আইনে জামায়াতের বিচার সম্ভব নয়। তার পুরো বক্তব্যের সঙ্গে বিষয়টি মিলিয়ে না দেখলে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে। তিনি আরো বলেছেন, ‘জামায়াতের বিচারে শাস্তি কি হবে এবং শাস্তি কে ভোগ করবে বিষয়টি ভাবতে হবে। ট্রাইব্যুনাল আইনে কোনো সংগঠনের বিচার বা শাস্তির বিধান নাই। আমাদের প্রচলতি আইনে (কোম্পানি আইন) সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শাস্তি হলে শাস্তি ভোগ করতে হয় পরিচালনা পর্ষদকে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতের সাজা ভোগ করবেন তাদের নেতারা। ইতিমধ্যে এসব নেতার অনেকের বিচার হয়েছে। সুতরাং একই ব্যক্তির দুইবার বিচার কিভাবে করা যায়?’
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে সরকার আইনের এ অস্পষ্টতা দূর করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন? জামায়াত ও এর নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ধীরগতি বা সরকারের পিছুটানের অভিযোগ তুলে যারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, তাদের উচিত আইনগত জটিলতার বিষয়েও মনোযোগ দেওয়া। না হলে এ জটিলতার অজুহাত দেখিয়েও সরকার কালক্ষেপণ করতে পারে।
জামায়াতের বিচারের ক্ষেত্রে শুধু যে আইনে অস্পষ্টতা আছে তাই নয়, এ মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে ট্রাইব্যুনালে যাওয়াই উচিত হবে না। কারণ মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নিষিদ্ধ চেয়ে গত বছরই সরকার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে রেখেছে, যা ‘এ মুহূর্তে ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের বিচারে বড় বাধা সরকারের একটি আপিল’ – See more at: http://www.kalantor.net/?p=45#sthash.5yhrH4Mw.dpuf শীর্ষক লেখায় উল্লেখ করেছি। দুঃখের বিষয় বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং ওই আবেদন করার সময় দায়িত্বে থাকা শফিক আহমেদ নাকি এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন। আমার এক সহকর্মী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তারা এ কথা জানান।

About

AZADUR RAHMAN CHANDAN E-mail : archandan64@gmail.com Date of Birth : November 27, 1964 Profession : Journalist (Working at The Daily Kaler Kantho) Academic Qualification : BScAg (Hons) from Bangladesh Agricultural University Institute : Patuakhali Agricultural College

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *