অধিকার নয়, আদালতের দয়া

আজাদুর রহমান চন্দন

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাও সর্বোচ্চ আদালতের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে এটি এ ধরনের অপরাধীদের সাংবিধানিক অধিকার নয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিজ ক্ষমতাবলে দেওয়া একটি সুযোগ বা দয়া। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন খারিজ করার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আসামি ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য এই আবেদন করতে পারবে। তবে রায়ের নির্ভরযোগ্যতায় ‘খাদ আছে’ বা ‘বিচার-বিভ্রাটের’ আশঙ্কা আছে বলে মনে করলেই আদালত তা পুনর্বিবেচনার জন্য গ্রহণ করবে। 
আজ ২৫ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে দণ্ডিতদের ক্ষেত্রেও আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন গ্রহণযোগ্য (মেনটেইনেবল) হবে। তবে তা আপিলের সমকক্ষ হবে না। এ রায় প্রকাশ হওয়ার ফলে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল  মো. কামারুজ্জামানও তার ফাঁসির আদেশ রিভিউয়ের আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন।
গতবছর ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। এরপর তার আইনজীবীরা দুটি আবেদন করেন। এর একটিতে ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয় এবং দ্বিতীয় আবেদনে রায় পুনর্বিবেচনা করে কাদের মোল্লার খালাসের আবেদন করা হয়।
সর্বোচ্চ আদালত তার আবেদন খারিজ করে দিলে সে বছর ১২ ডিসেম্বর রাতে কার্যকর করা হয় ফাঁসির দণ্ড। কিন্তু রিভিউ গ্রহণ ও খালাসের আবেদন একত্রে খারিজ হওয়ায় এ ধরনের মামলায় রিভিউ আদৌ চলবে কি-না, সে অস্পষ্টতা থেকে যায়। কাদের মোল্লার রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ বিতর্কের মীমাংসা হলো।
রায়ে বলা হয়েছে, সাধারণ মামলার ক্ষেত্রে রিভিউয়ের জন্য ৩০ দিন সময় দেওয়া হলেও এ আইনের মামলায় তা প্রযোজ্য হবে না। ১৯৭৩ সালের এই আইনের অধীনে আপিলের রিভিউয়ের সময় হবে ১৫দিন। আর তা নিষ্পত্তি হবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে। ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখলে এবং আসামিপক্ষ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তার নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।
আপিল বিভাগের সর্বোচ্চ সাজার আদেশে বিচারিক আদালত (ট্রাইব্যুনাল) মৃত্যু পরোয়ানা জারি করলে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন। তবে কারাবিধিতে উল্লেখিত ৭ বা ২১ দিনের সময়সীমা প্রযোজ্য হবে না।
এই রায়টি লিখেছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এসকে সিনহা। প্রধান বিচারপতিসহ অন্য চার বিচারপতি তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন নেতৃত্বাধীন এই বেঞ্চই কাদের মোল্লার রিভিউ খারিজের আদেশ দেয়।
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের নজির দেখিয়ে রায়ে বলা হয়, আপিলে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে মামলার পুরো প্রক্রিয়া উপস্থাপিত হয়। আইনের সীমায় সামগ্রিক দলিলাদির ভিত্তিতে সমগ্র প্রক্রিয়াকে বিবেচনা করা হয়। যদি কোনো পক্ষ আদালতের কোনো আদেশ বা রায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেক্ষেত্রে রিভিউয়ের সুনির্দিষ্ট বিধান না থাকলে আদালত অন্তর্নিহিত ক্ষমতাবলে তার রায় বা আদেশ রিভিউ করতে পারেন। আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যে কোনো আদালতে, বিচারের যে কোনো পর্যায়ে রিভিউয়ের ক্ষমতা প্রয়োগ করা যায়।
রায়ে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সর্বোচ্চ আদালত রিভিউয়ের এই সুযোগ দিচ্ছে ‘অন্তর্নিহিত ক্ষমতাবলে’, সংবিধানের ১০৪ বা ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে নয়। রায়ে আরো বলা হয়, ১৯৭৩ সালের াান্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন একটি সুরক্ষিত আইন। তাই সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে ‘পূর্ণাঙ্গ ন্যায়বিচারের’ বিষয়টি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। সংবিধানের ৪৭(ক)(২) ধারা অনুসারে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতরা সংবিধানের আলোকে প্রতিকার চাইতে পারেন না। তারা আপিলের অধিকার পান ১৯৭৩ এর আইনের আলোকে, সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে নয়। যদি ১০৩ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য না হয়, তাহলে রিভিউ করার জন্য ১০৪ ও ১০৫ অনুচ্ছেদও প্রযোজ্য হবে না। স্বাভাবিকভাবেই ১৯৮৮ সালের সুপ্রিম কোর্ট (আপিল বিভাগ) রুলও প্রযোজ্য হবে না। এতে বলা হয়, এটা এখন মীমাংসিত বিষয় যে, রিভিউ আবেদনকারীর অধিকার হিসাবে বিবেচিত হবে না।

[When a preliminary objection is raised about the maintainability of a petition or appeal, the court is required to dispose of that point before entering into the merit of the matter. It is because if the petition for review is not maintainable, it would be a futile attempt to enter into the merit of the matter causing wastage of the valuable times of the Court. There is no doubt that the Act of 1973 is a special law, but it is distinguishable from other special laws in operation because this piece of legislation has been protected in respect of detention, prosecution and punishment of any person, who is a member of any armed or defence or auxiliary forces or any individual, group of ndividuals or organization who is a prisoner of war for Genocide, Crimes against Humanity or War Crimes and other crimes under International Law. Under the Act-such person cannot challenge the legality of the proceedings on any of the grounds contained in Articles 26, 27, 28, 31, 35, 44 by resorting to Article 102 or other provisions of the Constitution. Sub-clause (2) of Article 47A debars an accused person who is being prosecuted or punished under the Act of 1973 to move the High Court Division for any of the relief(s) available under the Constitution other than the one provided in the Act.]

About

AZADUR RAHMAN CHANDAN E-mail : archandan64@gmail.com Date of Birth : November 27, 1964 Profession : Journalist (Working at The Daily Kaler Kantho) Academic Qualification : BScAg (Hons) from Bangladesh Agricultural University Institute : Patuakhali Agricultural College

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *